আর পাঁচটা সমবয়েসী ছেলের মত নয় ওদের জীবনযুদ্ধ। কারণ ওরা আলাদা। ওরা ছেলে হয়েও পুরোপুরি ছেলে নয়। কেউ জানেনা কে বেঁধে দিয়েছে পুরুষ ও নারীর লিঙ্গনির্দেশিত ও সমাজনির্দিষ্ট ছক কাটা আচরণবিধি। তবে এটুকু বোঝা গেছে সেই সংহিতা অনুসারে এই ছেলেদের চলাফেরা বাচনভঙ্গী - সবই জ্ঞমেয়েলিঞ্চ। অতএব এদের নিয়ে মজা লোটাই যায়। ব্যঙ্গ-বিদ্রূপে কোণঠাসা করাই যায়। ওদের সামনে তখন আর কোন পথ খোলা থাকে না অনিবার্যের কাছে নতি স্বীকার করা ছাড়া। আইনকে বুড়োআঙুল দেখিয়ে অশিক্ষিত দাই বা হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে গোপনে লিঙ্গচ্ছেদন (castration) করিয়ে বেশ কিছু ছেলে ভিড়ে যায় ওদের নিজেদের লোকের দলে - তথাকথিত স্বাভাবিক মানুষের সমাজ যাদের "হিজড়ে' বলে ডাকে। সমীক্ষা বলছে হাতুড়ে চিকিৎসকের হাতযশে এদের মধ্যে পঞ্চাশ শতাংশই অকালে পৃথিবীকে বিদায় জানায়। আর বাকিরা মেয়ের পোষাকে নাচের দলে যোগ দিয়ে খুঁজে পেতে চায় নিজেদের মুক্তির পথ। অর্কেস্ট্রা কোম্পানিগুলো ভাড়া নেয় এদের। চুক্তিতে লেখা থাকে একটা মোটা টাকার অঙ্ক। সাথে খাকা-খাওয়া ফ্রি। কিন্তু সেই টাকার খুব সামান্য অংশই এরা নিজের চোখে দেখতে পায়। ইউপি-বিহারের বিয়েতে বিয়েতে এদের ভাড়া খাটিয়ে কম টাকা রোজগার করে না এদের অন্নদাতারা। তবু এদের নির্ভর করতে হয় প্রতিটা নাচের শেষে বকশিসের ওপর। তিনমাস ধরে টানা নেচে রোজগার হয় হাজার ছয়েক মত। তার ওপর যদি ভাগ্য থাকে ভালো, যদি চেহারা হয় সুন্দর, নাচের ঠমকে যদি জাগে নেশা - তাহলে এই ছয়টা কখনো কখনো বারো হয়ে যেতে পারে। তবে মেহনতের এই রোজগারে এদের নিজের ভাগ খুবই সামান্য। এমনকি শূন্য হাতে বিদায় নেওয়াও বিরল নয়। বিয়ের মরসুম শেষ হলে দল ভাঙার পালা। যারা সদ্য পেশায় ঢুকেছে তারা প্রথম রোজগারের স্বাদ নিয়ে ঘরে ফেরে। অভিজ্ঞ নাচিয়েরা থেকে যায়। ইউপি-বিহার ছেড়ে এবার তারা দেশের অন্যান্য প্রান্তে ঘুরে বেড়ায় পরিযায়ী পাখির মত। স্থানীয় নাচাগানায় অংশ নেয়। মনোরঞ্জনের বিকিকিনি চলে সেখানেও। ... ...
এত থিওরি কপচে কীই বা হয়? আমার খোঁজার পরিধি আপনার দ্বিগুণ বলে হিংসে করেই বা কী হবে? চলুন না প্রেমে পড়ি, প্রেমিকের কি আর ওরিয়েন্টেশন হয়? ব্রহ্মা শতরূপাকে মেপে কেটেছেঁটে সাইজ করে নিলেও, শিব কিন্তু অত ঝামেলায় যাননি। শক্তি হোন বা হরি, যেমন-কে-তেমন গ্রহণ করেছেন। প্রেমিকের মাপকাঠিতে তাই তাঁর চেয়ে ভারি আর কেউ নেই। আর একটা কথা, যে থাকার সে থাকবেই, ঠেলে সরিয়ে দিলেও শেষ মুহূর্ত অবধি সম্পর্কটাকে বাঁচানোর জন্য লড়ে যাবে। আর যে না থাকার, সে স্ট্রেট গে বাই ট্রান্স যাই হোক না কেন থাকবে না। বিশ্বাস করুন, মেঘে মেঘে বয়েস তো কম হল না, নিজের ফার্স্ট হ্যান্ড অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি। ... ...
বৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তি (diversity and inclusion) জরুরি কেন? কারণ হল বৈষম্য ও প্রতিবন্ধকতা – যার মুখোমুখি সংখ্যালঘুরা হয়। এছাড়া কর্পোরেটের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যাক এতে কর্পোরেটের কী লাভ: ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির কর্মী কর্মক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের ভাবনা ও কর্মপদ্ধতি নিয়ে আসে। দশজনের মস্তিষ্ক একইরকম ভাবে কাজ করলে সেটা দশটা মস্তিষ্ক হয় না, দশের কম হয়। আগে মানুষ ভাবনার বৈচিত্রকে ভয় পেত, এখন সেটাকে কাজে লাগাতে জানে। পশ্চিমী দুনিয়ার কর্পোরেটগুলো এখন মানববৈচিত্র বিষয়টাকে বুঝতে শিখেছে। তবে এমন নয় যে সবাই বৈচিত্রের গুরুত্ব বোঝে, বা বুঝলেও কর্মক্ষেত্রে মানববৈচিত্র্য আনার বিষয়ে সক্রিয়। বৈচিত্র আনার ও রক্ষার উপায় কী? উত্তর হল, কর্মীনিয়োগের ক্ষেত্রে বৈচিত্র আনা, আর যে কর্মীরা আছে তাদের জন্য অনুকুল কর্মক্ষেত্র তৈরি করা। এই অনুকুল কর্মক্ষেত্র কিরকম? সেখানে কী আশা রাখা যায়? ... ...
আমার বন্ধুদের মধ্যে যেন বোমা পড়ল। কেউ ভাবতে পারেনি আমি ওই সম্পর্কে কখনও থাকব না, এমন হতে পারে। আর কারণটা জানাতে শুরু করলাম সবাইকেই, কিছু না লুকিয়ে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে কিছু মানুষের সঙ্গে আলাপ হল। সমকামী ও রূপান্তরকামী নারীপুরুষ সকলে। একটা অদ্ভুত জগৎ। সবটার সঙ্গে নিজেকে না মেলাতে পারলেও, চেষ্টা করতাম – যতটা পারা যায় জ্ঞান সঞ্চয় করতে। মনে হত, আর কোনও পরীক্ষা কি আছে, যা থেকে বোঝা যাবে আমি কী? আমার তো কোনও সমকামী সম্পর্কও নেই। কী করে প্রমাণ দেব, যে আমি সমকামী? কী করে বাকিদের বোঝাব, যে আমার সম্পর্ক ভাঙার আর কোনও কারণ নেই এটা ছাড়া? কী করে জাস্টিফাই করব আমার দাবি? ... ...
এইসবের মাঝখানে পড়ে আমার ভাবনাচিন্তারা সব কেমন গুলিয়ে যেতে থাকল। মনের মধ্যে প্রশ্ন ওঠা শুরু হল, সত্যিই কি এই বিভিন্ন ধরনের অসাম্যের বিরূদ্ধে আন্দোলন হাত ধরাধরি করে চলতে পারে? কি ভাবে ক্যুইর আন্দোলনে একজন বামপন্থী (মতান্তরে ভাম্প্যান্টি) ও একজন দক্ষিনপন্থীর (মতান্তরে ভক্ত চাড্ডীর) সহাবস্থান হতে পারে? যখন সমকামী আন্দোলনের জন্য কথা বলছি তখন কি আমার অন্য রাজনৈতিক/সামাজিক পরিচয়টাকে সরিয়ে রাখতে হবে? তখন আমার শুধু একমাত্রিক পরিচয়, আমি একজন সমকামি? কিন্ত তাহলে, যে ঘেটোর বিরুদ্ধে এই আন্দোলন, সে গন্ডীই কি নিজের চারিদিকে টেনে নিচ্ছি না আমি? আবার লিঙ্গ-আন্দোলনকে যদি ডান-বামে ভাগ করি, তাহলে কি শক্তিক্ষয় করছি না নিজেদের? "মিনিস্কিয়ুল মাইনরিটি" কি আরো ছোট হয়ে যাচ্ছে না? যদি দেখি ক্যুইর ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে শোভা পাচ্ছে স্পন্সর অনুপম খেরের কাট আউট, যিনি আমার মতে জে এন ইউ ইস্যুতে বাকস্বাধীনতার কন্ঠরোধ করতে চেয়েছিলেন, তখন কি করব? যেহেতু ক্যুইর ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল তাই তার সঙ্গে থাকব, না কি সরে আসব, আর না কি অপছন্দটাকে যথাস্থানেভ্য জানিয়ে রেখে চুপচাপ বসে যাব? আর না কি সন্ত টেরেসার মত বলব, টাকায় কোনও দাগ নেই? টাকা কোথা থেকে এল গুরুত্বপূর্ণ নয়, কি কাজে খরচ হল সেটাই আসল? ... ...
আপাতদৃষ্টিতে এবং বাইরের লোকের চোখে (অর্থাৎ যারা ইনসাইডার নন, বা ইনসাইডারদের সাথে ভালো করে মেলামেশা করেননি) LGBTQIA+ (লেসবিয়ান গে বাইসেক্সুয়াল ট্রান্স কুইয়ার ইন্টারসেক্স অ্যাসেক্সুয়াল এবং অন্যান্য) একটা বৃহৎ ক্যাটেগরি হলেও এদের প্রত্যেকেরই সমস্যাগুলো আলাদা – যদিও কিছু ওভারল্যাপের জায়গাও থাকে। এই বৃহৎ এবং পৃথক গোষ্ঠীদের একসাথে আনার একটা সাধারণ যোগসূত্র হল, এঁরা মূলধারার যে সংখ্যাগুরু লিঙ্গ এবং যৌন পরিচয় – হেট্রোসেক্সুয়াল এবং সিসজেন্ডার বা বিষমকামী এবং স্বীয়লৈঙ্গিক – এই পরিচয়গুলো এঁদের নয়। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মত এই বর্গগুলির মধ্যে সম্পর্ক হয়তো সবসময় বৈরিতার নয় (যদিও সেটাও থাকতেই পারে), তবুও প্রত্যেকের সমস্যার লিস্ট এতটাই আলাদা এবং ডিস্টিংক্ট, যে এদেরকে সবসময় একসাথে একটিমাত্র বর্গ হিসেবে দেখাটাই অনেক সময় হয়ে দাঁড়ায় সমস্ত সমস্যার মূল। ... ...
মাত্র চার বছর আগে অবধি আমরা আইনত বলতে পারতাম না, যে আমরা এলজিবিটিক্যু+ সম্প্রদায়ের মানুষ বা তাঁদের অধিকার নিয়ে কাজ করি। একটা লার্জার হিউম্যান রাইটস ছাতার তলায় ‘জেন্ডার’-এর আওতায় আমাদেরকে ফেলা হত। ফলে যা হওয়ার তাই হল – মানবাধিকার কমিশনের এক রিসার্চে যা উঠে এল, তা হল ৯২% ট্রান্সজেন্ডার মানুষ কোনোরকমের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত নয়। অথচ সরকারি স্তরে এই মানুষদেরকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলার কোনো পরিকল্পনাই নেই। ২০২১ সালে ভারত সরকারের সোশ্যাল জাস্টিস অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট মন্ত্রক সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর স্বশক্তিকরণ বাবদ যদি ১০০ টাকা খরচ করে থাকে, তার মধ্যে মাত্র ৪ পয়সা খরচ করেছিল ট্রান্সজেন্ডার মানুষদের জন্য – প্রায় ১২,০০০ কোটি টাকার মধ্যে মাত্র পাঁচ কোটি। অপরদিকে ভারতের কর্পোরেটগুলো সিএসআর বাবদ যে বিপুল অর্থ খরচ করে সামাজিক কারণে, সেখানে নারী কল্যাণ বা উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট জায়গা পেলেও, ট্রান্সজেন্ডার বা লার্জার এলজিবিটিক্যু+ সম্প্রদায়ের মানুষেরা জায়গা পাননি এখনও। ... ...
২০০১ সালে যখন প্রথম queer rights নিয়ে সক্রিয় হই, তখন আমি ১২ ক্লাসের ছাত্র। সবে জয়েন্ট এন্ট্রান্স দিয়েছি। তারপর ২০০৩-০৪ সালে প্রথম ডকুমেন্টারি ছবি “পিকু ভাল আছে”। শহরের কাগজে কাগজে রিভিউ আর কলেজ, ঘর, পাড়ার কোণায় কোণায় উৎসহিষ্ণু, অবাক, বিদ্রূপাত্মক চোখ – ছেলেটা কী বলে রে বাবা! এমনকি শহরের closeted গে, লেসবিয়ান, বাইসেক্সুয়াল মানুষেরাও internalised phobia থেকে থু থু করে উঠল – “দিব্বি ছিলাম বাপু, ৩৭৭ ধারা থেকে বেঁচে, ক্যাসুয়াল ডেট করে। দিল সব ফাঁস করে”। ... ...
এখন আমি কোন কিছু কেয়ার করি না। আমার কর্ম ক্ষেত্রে কিংবা অন্য কিছুতে আমার গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত সঠিক কি না, তা বিচার করবার জন্য অন্য কারুর প্রয়োজন আমি অনুভব করি না। IITতে আমার বন্ধুরা যারা সব সময় আমার যৌনতা নিয়ে প্রকাশ্যে সন্দেহ করত তবুও আমি যাদের বিশ্বাস করতাম, তাদের সবাইকে আমি মেইল করি। তারা আমাকে খুব সাপোর্ট করেছে। এর পর আমি আরও কিছু লোকের সামনে নিজেকে প্রকাশ করলাম, তার পর আরও কিছু লোকের সামনে। আমি খুব মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। কেউ কেউ আমার কথা অবিশ্বাস করেছেন, কেউ বা আমার বক্তব্যকে সম্মান জানিয়েছেন, আমাকে অপমান করেছেন আবার কেউ প্রচণ্ড চমকে গেছেন। হ্যাঁ, IITতে হোমোফোবিক আছে, কিন্তু সব থেকে যেটা প্রয়োজন IITতে অনেক উচ্চমনের ব্যক্তিরা আছেন, তারা আমাকে আশা দিয়েছে। আমি যা ভেবেছিলাম, IIT সেই রকম নয়, কিন্তু সম্পূর্ণ পারফেক্ট বলে কিছু কি পাওয়া যায়? আমি বাস্তব, শেষমেশে ছাত্র সমাজের কণ্ঠ হিসাবে আমার গল্প স্বাধীনতা পেয়েছে। আমি, আমার ক্লাসে কিছু বন্ধুদের পেয়েছি যারা গে-দের ভাল দিক গুলো চিন্তা করে গে হওয়া কতো ভালো তা আমাকে বলে। আমি অনেক প্রোফেসার পেয়েছি যারা আমার কাছে সমকামীদের প্রতি তাঁদের সাপোর্ট প্রকাশ করেছেন। এ সব কিছুর ভিতর দিয়ে আমি দিনের শেষে বিছানায় যাই, জানি আমি এবার নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবো। যদিও আমি অনেক অনুশোচনা, লজ্জা, ডিপ্রেশানের ভিতর দিয়ে গেছি। মেডিক্যাল পরীক্ষা দিয়েছি, আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ছি, সামাজিক বাধানিষেধ পেয়েছি। কিন্তু যখন আমার গল্পটা কতটা ‘প্রেরণাদায়ক’ জানিয়ে আমি আবারও মেইল পাই, তখন আমি অনুভব করি একটা সময় আসবে যখন কোন নতুন সমকামী নিজের প্রকৃত পরিচয় দিতে কখনোই বিব্রত বোধ করবে না, সে কাঁদবে না বরং লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে টিভি সিরিয়ালের কোন নতুন হিরোর উপর তার ক্রাশের কথা সে তার রুম মেট’দের কাছে গল্প করবে। ... ...
সেখানেও এখন বিধি বাম করে রেখেছেন, ওবামা সাহেব। এখন gay কি homosexuality টাইপ করুন, পাতার পর পাতা জুড়ে এখন তাঁর সমকামী বিবাহকে স্বীকৃতিদানের খবর, আর তাই নিয়ে সমকামীদের হুল্লোড়বাজি । হপ্তা দুই ধরে হট টপিক। আর আরো তো আরো, homosexuality + cure দিয়ে সার্চাতে গেলে আরোই গণ্ডগোল। সমকামীদের ‘অসুখ’সারানো যেত বলে যে স্টাডি দাবি করেছিল, তা কেন ভুল, এসব বলে এতদিন মনোবিদদের পাতার পর পাতার কাউন্টার তো ছিলই, আপনাকে কনফিউজ করার জন্য সবরকম উপকরণ সহ। দুদিন আগে খোদ সেই স্টাডির মূল কত্তাই বোম ফেলেছেন। ক্ষমা চেয়ে। রীতিমতন কান্নাকাটি করে। নিজেই কইছেন, স্টাডি নাকি ভুল ছিল। ক্ষমা চেয়েছেন আলাদা করে সেই সমকামীর কাছেও যিনি নাকি ওই সারানোর থেরাপি নিতে গিয়ে আত্মহত্যা করতে বসেছিলেন। ... ...
আমাদের এই গাইডটি সঙ্গে রাখুন, পড়ুন, পড়ান, কনফিডেন্সের সাথে সমকামিতা সারান। এমনকি এই সব ক’টি ভাট সত্যি হলেও এটি অনুসরণ করুন। অঘটন আজও ঘটে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি হয়না কি ? এই ঘোর কলিতেও ? এছাড়াও আপনার চেষ্টাটাই আসল। এই অসুখ সারাতে উদ্গ্রীব সকলের জন্য রইলো শুভেচ্ছা বার্তা, গেট ওয়েল সুন ! ;-) ... ...
যৌনকর্ম আর পাঁচটা পেশার মতই একটা পেশা মাত্র। কারখানার শ্রমিক গতর খাটিয়ে অর্থ উপার্জন করেন, যৌন শ্রমিকও গতর খাটিয়ে অর্থ উপার্জন করেন। পিতৃতন্ত্র আমাদের শেখায় যৌনতা খারাপ, এবং নারী দেহ ভোগের বস্তু। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই পিতৃতান্ত্রিক সমাজে আর্থসামাজিক ভাবে দুর্বল মহিলাদের অসহায়তাকে হাতিয়ার করে তাঁদের কে পাচার করে নিয়ে আসা হয়, এবং যৌন দাসত্বে জোর করে ঢুকিয়ে শোষণ করা হয়। কারখানা-শ্রমিকদের যেটুকুও সামাজিক মর্যাদা আছে, সেটুকুও এনাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয়। এই অবস্থার বদলের জন্যে ক্রমাগত আন্দোলন করে চলেছেন যৌনশ্রমিক মা বোনেরা। ... ...
“কী রে, তোর বিয়েতে কবে খাব... ???” এই প্রশ্ন তো সয়ে গেছে এবং আমি বেশ ইনোভেটিভ উত্তরও দিই। তার ভয়ে আর কেউ এই কথা আর তোলে না। তবে একটা জিনিস অনুভব করি – যেটা আজকাল বেশ মনে হয়; সেটা হল একটা অদ্ভুত exclusion – অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার একটা অনুভূতি ... আরও কেমন লাগে, যখন দেখি, যে সেই বিবাহিত জুটিদের নিজেদের মধ্যেকার হাসা-হাসি-ইয়ার্কি, সেখানেও সেই exclusion-এর একটা অনুভূতি। অথচ আমার মনে কিন্তু একটা অপূর্ণ সাধ রয়েই গেছে – বিয়ে করার, ঘর বাঁধার – এইসব শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি শুনলে এই ইচ্ছেগুলো বেশ নড়েচড়ে ওঠে, নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেয়, মন কেমন করিয়ে তোলে। ... ...
যদিও সামাজিক অন্তর্ভুক্তিকরণ তার পূর্ণ রূপে এখনো বহুদূর, ছোট ছোট ধাপ নেওয়া হচ্ছে, কিছু সংলাপ শুরু হয়েছে। তবে এই সংলাপগুলোর বেশিরভাগই বৈচিত্র আর অন্তর্ভুক্তি সংক্রান্ত নীতি বিষয়ক, নানান পরিচয়ের মান্যতা প্রদান, আর প্রান্তিক মানুষজনের প্রতি একটু আলাদা মনোযোগ যাতে তারা নানান জায়গায় চাকরি পেতে আবেদন করেন। বিশেষ করে স্টার্টআপ, নন-প্রফিট সংস্থা, ছোট ছোট ফর প্রফিট কর্মক্ষেত্রগুলো যেগুলো সামাজিক ন্যায় এবং অন্তর্ভুক্তির প্রতি দায়বদ্ধ। এদের বেশিরভাগ কর্মখালির বিজ্ঞাপনগুলোয় লেখা হয় "আমরা সম-সুযোগে বিশ্বাসী চাকুরী দাতা এবং প্রান্তিক গোষ্ঠী যেমন প্রান্তিক জাতি, লিঙ্গ, যৌনতা এবং দক্ষতার মানুষদের আবেদন জানাতে উৎসাহিত করি।" কিন্তু, আমরা যখন "সমান সুযোগ"-এর কথা বলছি, আমরা কি ইক্যুইটি-র থেকে সরে যাচ্ছি? ... ...
ভদ্রমহিলা বললেন, আসলে ছেলে তো, ফুলটুল দেখলে আবার পছন্দ করবে না। আমার মনে হল বলি, ছেলের বিয়ের পর খাটটা কি ক্যাকটাস দিয়ে সাজাবেন? পৌরুষের এই সামাজিক নির্মাণ পুরুষকেই বেঁধে রেখেছে নির্মম শিকলে। ছেলেরা ফুল পছন্দ করবে না, বন্দুক পছন্দ করবে। ছেলেরা শান্তির পক্ষে থাকবে না, যুদ্ধের পক্ষে থাকবে। ছেলেরা ফল খাবে না, মদ খাবে.... ... ...
উফফ্ দু-দন্ড যে একটু শান্তিতে দিন কাটাবো তার যো নেই। হতভাগাগুলো আবার “দাও দাও” আবদার শুরু করেছে। হ্যাঁ রে অনামুখোর দল, এই যে তোদের কথামত ৩৭৭ সরালুম, তাতেও তোদের আশ মিটল না। না, মানে আমরা সরিয়েছি তা নয়, সুপ্রীম কোর্ট সরিয়েছে, কিন্তু আমরা কি তাতে কিছু বলেছি? হুঁ হুঁ বাবাসকল, এ হল অমৃতকাল, সবকা বিকাশ না করে ছাড়ব না। এই যা, বাবাসকল বলে দিলাম, তোদের তো আবার কে বাবা আর কে মা তার ঠিকঠিকানা নেই। আজকে দাড়িগোঁফওয়ালা শাড়ি পরে ঘুরছে তো কাল আরেকজন মেয়ে থেকে ছেলে হয়ে যাচ্ছে। এরকম ছিল রুমাল, হয়ে গেল বেড়াল চলতে থাকলে আমরা কী আর তাল রাখতে পারি? যাক গে, যাক। যে কথা বলছিলাম। ৩৭৭ গেল কি গেল না, তোরা এসে উপস্থিত হলি বে করব বায়না নিয়ে। বলি বিয়ে কি ছেলের হাতের মোয়া না নোটবন্দী যে চাইলেই করে ফেলবি? এ হল অতি গুরুতর বিষয়, সমাজের হিত, দেশের ভিত, আর ঐতিহ্যের মিথ সব এতে মিলেমিশে আসে। অমন বিয়ে করব বললি আর অমনি আমরা অনুমতি দিয়ে দিলাম, এ আবার হয় না কি? ... ...
আর তার সাথে মনের ভেতর খচখচ করছে আরেকটা প্রশ্ন। গত তিন দশকের লাগাতার লড়াইয়ের শেষে ৩৭৭-এর প্রশ্নে দেশ এগোলো ঠিকই কিন্তু একই সময়কালে কি পিছিয়ে পড়ল না আরও অন্যান্য মানবাধিকারের ক্ষেত্রে? আমরা কি তিন দশক আগে ভাবতে পেরেছিলাম একের পর এক রাজ্য খাদ্যাভ্যাসের ওপর নিষেধাজ্ঞা বসাবে? আন্তঃধর্মীয় প্রেমকে আদালতে দাঁড়িয়ে প্রমাণ করতে হবে যে সেটা জিহাদ নয়? খাস কলকাতার বুকে আলিঙ্গনের অপরাধে গনপিটুনির শিকার হবেন যুবক-যুবতী? ট্রেনের কামরায় প্রধানমন্ত্রীর নাম বলতে না পারায় প্রহৃত হবেন দরিদ্র যুবক? গোরক্ষার নামে দেশ জুড়ে মানুষ খুন হবে? আর সেই খুনিদের মালা পরিয়ে অভিনন্দন জানাবেন দেশের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী? সরকার বিরোধী ইন্টেলেকচুয়ালস ও অ্যাক্টিভিস্টদের নামের লিস্ট তৈরী হবে যেমন হয়েছিল নাজি জার্মানিতে বা পাকিস্তান অধিকৃত বাংলাদেশে? একটা গোটা রাজ্যের নাগরিকদের প্রমাণ দাখিল করতে হবে যে তাঁরা "ঘুসপেটিয়া" নন? ... ...
এই বহুমুখী আক্রমণ অস্বস্তিকর হলেও, হাসিমুখে মজাদার প্রতিক্রিয়া দিতে হয়। সীমা অতিক্রম করলে একটু মৃদু বিষ মিশিয়েও দিতে হয়। অনেক বছর ধরে এটা করতে হচ্ছে। অন্য কোনো সমবয়সী কিম্বা জুনিয়র সহকর্মীর বিয়ের আগে আইবুড়ো ভাত খাওয়ানোর আয়োজন হয়। তখন এই উপদ্রব আরও বেশি হয়। সরাসরি বলার সাহস হয় না বেশির ভাগ পুরুষ সহকর্মীর। তাদের কথার মধ্যে থাকে পরোক্ষ প্রশ্নমালা। ... ...
এক জানালা বৃষ্টির সামনে সেদিন অনুষ্ঠান হবে। যারা মোটা করে কাজল পরে আসবে, সকলে কাঁদবার সুযোগ পাবে। এক-এক করে গিয়ে দাঁড়াতে হবে জানালায়। চোখের কালো জল মিশে যাবে কার্নিশে। সম্পূর্ণ মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার আগে অবধি পড়া হবে জয় গোস্বামী। তারপর ব্যথাগুলোকে একটা কাচের প্লেটে করে কিছুক্ষণ রাখা হবে শুকিয়ে যাওয়া রজনীগন্ধার স্টিক-এর পাশে। সমান করে দু’দিক কেটে সেলাই করা হবে। সাইকেল থেকে পড়ে গেলে, ওটাই শুধু ব্যথা হলে, কত ভালো হত। ‘ওর সাথে আর কোনোদিন কথা হবেনা’-র সাথে ‘বাড়ি থেকে কোনোদিন মেনে নেবে না’-কে সমান করে সেলাই করবি। দু’দিকের দুটো হাতা হয়ে যাবে। বোতামের ঘাট রাখিস। দুটো করে বোতাম দিবি, ভিতরের দিকে ‘পাড়ার লোক কী বলবে’, আর বাইরের দিকে ‘বড়রা যা বলে ভালর জন্য’। ... ...